দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ালো সমুদ্রের তীরে উৎসবে মেতে ওঠে হাজার হাজার মানুষ। ভীড় করেন হাজার হাজার পর্যটক। উৎসবের উপকরণ কাদা। উপকূলবর্তী বোরিয়ং শহরে চলে বিখ্যাত ‘বোরিয়ং মাড’। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে জমে ওঠে এই মাটির উৎসব।
প্রতিবারের মত এবার দক্ষিণ কোরিয়ার ২১তম ‘বোরিয়ং মাড ফেস্টিভাল’ ২০১৮ শুরু হবে আগামি ১৩ জুলাই ২০১৮ থেকে ২২ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত।
১৯৯৬ সনে দক্ষিন কোরিয়ার একটি প্রসাধন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোরিয়ং অঞ্চলের মাটি সংগ্রহ করেন। ঐ মাটিতে প্রসাধন সামগ্রীর রাসায়নিক উপাদান বেনটোনাইট, গার্মানিয়ামস প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরী হয়। মাটি থেকে সংগৃহিত উপাদান থেকে প্রস্তুতকৃত প্রসাধনী সামগ্রীকে জনপ্রিয় করার জন্য কোম্পানী মাটি উৎসবের আয়োজন করে। তাদের আশা ছিলো এই উৎসবের মাধ্যমে জনগন মাটির ব্যবহার এবং মাটি থেকে প্রস্তুতকৃত কসমেটক্স সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আগ্রহী হবেন। এর দু বছর পরে ১৯৯৮ সনে প্রথম মাটি উৎসবের আয়োজন করা হয় এবং বর্তমানে শুধু কোরিয়া নয় আমেরিকা সহ অন্যন্য দেশেও এটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
প্রতিবছর রাজধানী শিউলের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিনের বোরিয়ং অঞ্চলের মাটি সংগ্রহ করে ট্রাকে করে নেয়া হয় ডেইচন সমুদ্র বীচে । ওখানে এই মাটিকে নরম করে উৎসবের জন্য প্রস্তুত করা হয়। জুলাই মাসের ২য় উইকেন্ডে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান এবং শেষ হয় মাসের শেষ উইক এন্ডে। প্রতি বছর মাটি উৎসব দেখতে আসা এবং মাটিতে মাখা মাখি করতে কোরিয়া ভ্রমন হাজার হাজার মানুষ। শুরু থেকে পরবর্তী ২০ বছরে ভ্রমণ করেছেন প্রায় ২৫ লাখ ভ্রমণকারী।
শুধু মাটি উৎসব নয়, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজক গন আরো কিছু আকর্ষনীয় ইভেন্টের আয়োজন করেন। কাদা পুল, কাদা স্লাইড, কাদা কারাগার এবং কাদা স্কিইং প্রতিযোগিতা এর মধ্য অন্যতম। বডি পেইন্টিং এর জন্য বিভিন্ন রঙয়ের কাদা বানানো হয়, এসব দিয়ে ভিজিটরগন গায়ে আঁকা জুকি করেন।
একটি বিশাল স্টেজ বানানো হয় সমুদ্র বীচ এলাকায়। এখানে গান গাওয়া হয়, গানের প্রতিযোগিতা হয়।যে যেমন পারে ফ্রিস্টাইলে গান গাইতে থাকেন। অবশ্যই তা গায়ে কাদা মেখে ভুত হয়ে।
কত সহজ একটি উপকরন দিয়ে কত মজার একটি উৎসব। এই কাদা মাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটক গন কোরিয়াতে।
বোরেওয়ং পাহাড়, সাগর এবং দ্বীপ পরিবেষ্টিত অসাধারণ সৌন্দর্যের উৎস হওয়ায় অসংখ্য পর্যটক এ ফেস্টিভালে যোগ দিতে আরও বেশি তাগিদ অনুভব করেন। এছাড়া প্রায় ৩৬টি মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর বাড়তি আকর্ষণ। বিশ্বের মানুষ যে কম-বেশি উৎসবপ্রিয়, দক্ষিণ কোরিয়ার এই মাড ফেস্টিভাল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
রঙিন এই উৎসবের ইতি ঘটে বিশাল আতোসবাজি দিয়ে। মুগ্ধ হয়ে সমগ্র শহর তখন তাকিয়ে থাকে আলোকিত আকাশের দিকে।